বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে (বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান) যে অবিচার, অসমতা, সামাজিক অস্থিতিশীলতা, মারামারি, দাঙ্গাগুলো দেখা দিচ্ছে তার পিছনে রয়েছে ধর্মান্ধতা, সংকীর্ণতা, ধর্মের অপব্যাখ্যা এবং ধর্ম নিয়ে অতিরঞ্জিত কার্যকলাপ ও উগ্র জাতীয়তাবোধ।ধর্মীয় উগ্রবাদ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদ সামাজিক শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের জন্য বাধাস্বরূপ এবং এ দুটি বিষয় বিশ্বের অনেক জায়গায় বিভাজনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।যেকোনো উগ্রবাদ বিভাজন সৃষ্টি করে, কখনও একত্রিত করে না। এমন কোনো নজির নেই যেখানে ধর্মীয় উগ্রতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের কারণে দুটি সমাজ বা দেশ এক হয়েছে। সমাজের শান্তি ও সম্প্রীতি নির্ভর করে একটি অঞ্চলের মানুষের ইতিবাচক মানসিকতার উপর; ধর্ম বা জাতীয়তার উপর নয়।একই ধর্মের ও গোত্রের মানুষ হলেই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারবে বিষয়টি এমন নয়। ধর্মীয় কারণে যদি আমরা এক হতে পারতাম তাহলে সৌদি আরবের সঙ্গে ইয়েমেনের যুদ্ধ হতো না, ইরান ও ইরাক এক থাকতো। ভারতীয় কাশ্মীর ও পাকিস্তানের কাশ্মীরের ধর্ম এক হলেও তারা এক নয়।এসব উদাহরণ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, একই ধর্মের মানুষ হলেই যে এক দেশ বা সমাজে শান্তিতে থাকবে বিষয়টি এমন নয়। উগ্রবাদ মিলের চেয়ে বিভাজনকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।বিশ্ব তথা সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ধর্মীয় সহনশীলতা জরুরি, উগ্রতা নয়। তাই শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমাদের শিক্ষা ও গবেষণা ব্যবস্থা এমনভাবে গোছাতে হবে যেন কেউ ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত না করতে পারে এবং বিভাজন সৃষ্টি করতে না পারে।একটি সমাজ দেশ ও জাতির মাঝে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার মূল বিষয়টি হল মানুষের ইতিবাচক মানসিকতা। আর এই বিষয়ে আমাদের সবারই উচিত নিজেদের পক্ষ থেকে সচেতন হওয়া। ধর্ম আসলে কী বলে সেটা আমাদের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কোনো ধর্মই সহিংসতাকে সমর্থন দেয়নি, অশান্তিকে প্রশ্রয় দেয়নি অথবা কাউকে অসমতার চোখে দেখা উচিত বলে ব্যক্ত করেনি। সব ধর্মে বলা হয়েছে শান্তি বজায় রাখতে, অসমতা দেখলে সমতা আনার জন্য কাজ করতে। কোনো ধর্মের অপব্যাখ্যা বা এর অপব্যবহার না করতে।আমরা যদি এসব বিষয়ে নিজ নিজ স্থান থেকে সচেতন হই তাহলে আমাদের মাঝে কেউ বিভাজন সৃষ্টি করতে পারবে না। আমার ধর্মের প্রতি আমার যেমন মায়া-মমতা ও শ্রদ্ধা রয়েছে, ঠিক অন্যের ধর্মের প্রতি অনুরূপ শ্রদ্ধা থাকা উচিত।