২০২১–এর সিপিআই বিশ্লেষণ করে টিআই বলছে, দুর্নীতি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষা এবং বিকাশে অন্যতম প্রতিবন্ধক। দুর্নীতির কারণে মানবাধিকার ও মানবাধিকারকর্মীর জন্য নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। টিআইয়ের সূত্র অনুযায়ী, ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী যে ৩৩১ জন কর্মীর হত্যার ঘটনা ঘটেছে, তার ৯৮ শতাংশ ঘটেছে এমন সব দেশে, যেখানে দুর্নীতির ব্যাপকতা প্রকট। তদুপরি কমপক্ষে ২০টি এরূপ হত্যার শিকার হয়েছেন দুর্নীতিবিরোধী কর্মী। দুর্নীতির দুষ্টচক্র গণতান্ত্রিক অবক্ষয়ের অনুঘটক; এর মাধ্যমে বিশেষ করে গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দখল করার মাধ্যমে অকার্যকর করে দেওয়া হয়; যার কারণে মানবাধিকার হরণ বৃদ্ধি পায়, মানুষের রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার খর্ব হয় এবং একই সঙ্গে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিতের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়। যার কারণে দুর্নীতির গভীরতর ও ব্যাপকতর বিস্তৃতি ঘটে।
বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা ও নির্ভরযোগ্য তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, দুর্নীতিকে সুরক্ষা প্রদান ও বিকাশে বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা খর্ব করাকে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যার মাধ্যমে দুর্নীতিকে সামাজিকভাবে প্রতিহত করার পরিবেশকে সংকুচিত করা হয়। দুর্নীতির অবাধ প্রসারের কারণে দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহি নিশ্চিতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে পড়ে; এর ফলে বিচারহীনতার বিকাশ ঘটে এবং দুর্নীতিকে জীবনাচরণের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। একদিকে আইনের শাসনের ঘাটতি, অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালো আইনের বিতর্কিত ধারা এবং তার অপব্যবহার বাংলাদেশে যেভাবে বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে, তাতে যৌক্তিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, আমরা আজ কোন পথে?রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শুদ্ধাচার–সহায়ক আমূল পরিবর্তন ব্যতিরেকে দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অর্থ ও দুর্বৃত্তায়ন থেকে রাজনীতি, রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও অবস্থানকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আইনের শাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে তার স্ব–আরোপিত সীমারেখা থেকে বের হতে হবে, যে সীমারেখার কারণে তার পক্ষে প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতির ক্ষেত্রে কার্যকর জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। আইনের চোখে সবাই সমান—এই ভিত্তি থেকে ব্যক্তির পরিচয় বা অবস্থান দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে কমিশন কাজ করবে, এটিই তার আইনগত বাধ্যবাধকতা এবং জনগণের প্রত্যাশা।