আফগানিস্তানের মৌলবাদের মূল কারন ১৯৮০ সালের পর থেকে বহিঃশক্তির প্রকাশ্য হস্তক্ষেপ ও তার প্রভাব যার জন্য সন্ত্রাসবাদ ও তার কণ্ঠলগ্ন মৌলবাদের বিকাশ । বাংলাদেশে এই অবস্থা এখনও না এলেও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের থেকে শিক্ষাখাতে ঢালাও অনুদান নেবার ফলে দেশের মাদ্রাসাগুলির ধর্মীয় পাঠ্যসূচীতে ঐ বহিঃশক্তিগুলির চাহিদানুযায়ী মৌলবাদী (ওয়াহাবী ) পাঠ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হচ্ছে যার ফলে দরিদ্র দেশের অল্পব্যয়ের মাদ্রাসাগুলি হতে যাচ্ছে মৌলবাদের ধারক ও বাহক । যেহেতু ছাত্ররাই জাতির মেরুদন্ড, এর সুদূরপ্রসারী ফল দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি এমনকি রাজনীতিকেও অনিবার্য্য ভাবে প্রভাবিত করতে চলেছে । এটি রোধ করতে গেলে এই অনুদানগুলি বর্জন করা একান্ত প্রয়োজন । প্রয়োজন দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা , ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার। কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি দরিদ্র দেশে এটি এখনও সম্ভব হচ্ছে না। এর পরিনতি অবশ্যম্ভাবী । এটাও বাস্তব সত্য যে শীর্ষ শক্তিগুলির আক্রমনে সিরিয়া ও ইরাকে সন্ত্রাসবাদী জঙ্গীদলগুলি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার পর সুন্নীবিশ্বের যে সূতিকাগারগুলি এদের পুনরুজ্জীবনের জন্য নতুন যুবশক্তির যোগান দিচ্ছে তাদের মধ্যে প্রধান হল ওয়াহাবী মাদ্রাসাগুলি ৷ আমাদের দেশে ধর্মীয় সংস্কারভিত্তিক সামাজিক আন্দোলন হয়েছিল ইংরেজ আমলেও। ওয়াহাবি আন্দোলন ও ফরায়েজি আন্দোলন ইতিহাসবিখ্যাত। এসব আন্দোলন ইসলাম ধর্মের সংস্কার দিয়ে শুরু হলেও তা ব্রিটিশ রাজবিরোধী ও জমিদারবিরোধী শ্রেণিসংগ্রাম ও জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে পরিণত হয়েছিল। শহীদ বীর তিতুমীর মুসলমান কৃষককে ধর্মশিক্ষা দিতেন, আরবি-ফারসি শব্দে নাম রাখা ও ‘আকিকা’ করার কথা বলতেন। তিনি দাড়ি রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছিলেন। ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা পীর মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়া পোশাকপরিচ্ছদে হিন্দু থেকে মুসলমানদের স্বতন্ত্র হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি ধুতিকে হিন্দুর পোশাক বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ওয়াহাবি নেতা তিতুমীর অথবা ফরায়েজি আন্দোলন জনপ্রিয় হয়েছিল এসব কারণে নয়। তাদের জমিদারবিরোধী সংগ্রামেই হিন্দু-মুসলমাননির্বিশেষে সব কৃষক ও গরিব মানুষ যোগদান করেছিল।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, আমাদের সংস্কৃতিতে ধর্মীয় চেতনা কখনোই প্রাধান্য বিস্তার করেনি। বরং অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি—যা আমাদের লোকায়ত সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে ছিল এবং এখনো আছে, তা খুবই শক্তিশালী। তাই আনিসুল হকের কথার প্রতিধ্বনি করে আবারও বলব, ‘বাংলাদেশের মানুষের পরাজয় নেই, কারণ তার আছে সংস্কৃতি।’চেষ্টা করেছিলেন বাংলা ভাষা বিকৃত করার এবং বাঙালির সংস্কৃতি ধ্বংস করার। কিন্তু পারেননি। কারণ, এই সংস্কৃতির অভ্যন্তরীণ বল অনেক বেশি। বরং পাকিস্তানি ভাবাদর্শ ছিল বড়ই ঠুনকো, তাই তা টিকতে পারেনি।তবে এ কথা সত্য যে গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তান আন্দোলনের জোয়ারে সাময়িকভাবে হলেও ভেসে গিয়েছিল এই দেশের মুসলিম জনগণ। তারা ভুল বুঝেছিল। কৃষক ভেবেছিলেন জমিদারি শোষণ থেকে মুক্তি পাবেন। মধ্যবিত্ত ভেবেছিল তাদের শ্রেণিগত উন্নতি হবে। দ্রুতই তাদের স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছিল। পাকিস্তান আমলে ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু কাজে আসেনি। এখনো যারা মনে করে, মুসলমানিত্ব পরিচয়ের জন্য বাঙালিত্ব ঘুচিয়ে দিতে হবে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করে। তারাই পয়লা বৈশাখের বিরোধিতা করে, আলপনা আঁকাকে সুন্দর আর্ট হিসেবে না দেখে আলপনার গায়ে কালি লাগায়, ভাস্কর্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জানে না।আমাদের দেশে ধর্মীয় সংস্কারভিত্তিক সামাজিক আন্দোলন হয়েছিল ইংরেজ আমলেও। ওয়াহাবি আন্দোলন ও ফরায়েজি আন্দোলন ইতিহাসবিখ্যাত। এসব আন্দোলন ইসলাম ধর্মের সংস্কার দিয়ে শুরু হলেও তা ব্রিটিশ রাজবিরোধী ও জমিদারবিরোধী শ্রেণিসংগ্রাম ও জাতীয়তাবাদী সংগ্রামে পরিণত হয়েছিল। শহীদ বীর তিতুমীর মুসলমান কৃষককে ধর্মশিক্ষা দিতেন, আরবি-ফারসি শব্দে নাম রাখা ও ‘আকিকা’ করার কথা বলতেন। তিনি দাড়ি রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছিলেন। ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা পীর মহসিন উদ্দিন দুদু মিয়া পোশাকপরিচ্ছদে হিন্দু থেকে মুসলমানদের স্বতন্ত্র হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি ধুতিকে হিন্দুর পোশাক বলে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ওয়াহাবি নেতা তিতুমীর অথবা ফরায়েজি আন্দোলন জনপ্রিয় হয়েছিল এসব কারণে নয়। তাদের জমিদারবিরোধী সংগ্রামেই হিন্দু-মুসলমাননির্বিশেষে সব কৃষক ও গরিব মানুষ যোগদান করেছিল।ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, আমাদের সংস্কৃতিতে ধর্মীয় চেতনা কখনোই প্রাধান্য বিস্তার করেনি। বরং অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মানবিক মূল্যবোধ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গি—যা আমাদের লোকায়ত সংস্কৃতির উপাদান হিসেবে ছিল এবং এখনো আছে, তা খুবই শক্তিশালী। তাই আনিসুল হকের কথার প্রতিধ্বনি করে আবারও বলব, ‘বাংলাদেশের মানুষের পরাজয় নেই, কারণ তার আছে সংস্কৃতি।’ চেষ্টা করেছিলেন বাংলা ভাষা বিকৃত করার এবং বাঙালির সংস্কৃতি ধ্বংস করার। কিন্তু পারেননি। কারণ, এই সংস্কৃতির অভ্যন্তরীণ বল অনেক বেশি। বরং পাকিস্তানি ভাবাদর্শ ছিল বড়ই ঠুনকো, তাই তা টিকতে পারেনি।তবে এ কথা সত্য যে গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তান আন্দোলনের জোয়ারে সাময়িকভাবে হলেও ভেসে গিয়েছিল এই দেশের মুসলিম জনগণ। তারা ভুল বুঝেছিল। কৃষক ভেবেছিলেন জমিদারি শোষণ থেকে মুক্তি পাবেন। মধ্যবিত্ত ভেবেছিল তাদের শ্রেণিগত উন্নতি হবে। দ্রুতই তাদের স্বপ্নভঙ্গ ঘটেছিল। পাকিস্তান আমলে ধর্মীয় সুড়সুড়ি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু কাজে আসেনি। এখনো যারা মনে করে, মুসলমানিত্ব পরিচয়ের জন্য বাঙালিত্ব ঘুচিয়ে দিতে হবে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করে। তারাই পয়লা বৈশাখের বিরোধিতা করে, আলপনা আঁকাকে সুন্দর আর্ট হিসেবে না দেখে আলপনার গায়ে কালি লাগায়, ভাস্কর্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে জানে না।