জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ ব্যাধি নিরসনে বেশকিছু পদক্ষেপ বর্তমান সরকার গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের সূচক-২০২০-এ মোট ১৬৩টি দেশের মধ্যে ৩৩তম স্থানে অবস্থান করেছে বাংলাদেশ।

জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে অ্যান্টি টেররিজম অ্যাক্ট পাস করে এবং হলি আর্টিজান হামলা পরবর্তী ২০১৬ সালে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) গঠন করে।

জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ ব্যাধি নিরসনে বেশকিছু পদক্ষেপ বর্তমান সরকার গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদের সূচক-২০২০-এ মোট ১৬৩টি দেশের মধ্যে ৩৩তম স্থানে অবস্থান করেছে বাংলাদেশ। তবে এসব পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। এই প্রেক্ষাপটে পরিতুষ্টির পরিধি সীমিত। জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদের মতো মহামারি সৃষ্টিকারী ভাইরাস দমনের জন্য বিভিন্নমুখী কার্যক্রম গড়ে তোলা অতি আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জঙ্গিবাদ একটি আদর্শ এবং একটি বৈষয়িক সমস্যা। স্থানীয় সামাজিক ও রাজনৈতিক অসন্তোষ ছাড়াও বৈশ্বিক উগ্র ধারণা, ধর্ম বিদ্বেষ বা দর্শন জঙ্গিবাদ প্রলুব্ধ করে। বাংলাদেশে সেটা মোকাবিলার বহুমুখী প্রচেষ্টার মূল হিসেবে হামলা বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ‘hard approach’ নীতি গ্রহণ করে। যদিও তিন বছর বাংলাদেশে বড় কোনো হামলা হয়নি, কিন্তু ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন জঙ্গি ঘটনাগুলো তাদের কৌশল পরিবর্তনের একটি অংশ হতে পারে এবং জঙ্গিরা সেই দুর্বলতার সুযোগেই থাকে।

আমি মনে করি, কঠিন উপায়ে মিলিটারি কর্মকৌশলের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ স্থায়ীভাবে দূর করা যায় না, একই সাথে অবক্ষয় ও পুর্নবাসন (Deradicalization and Rehabilitation) কর্মসূচির মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিবার ও সমাজে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা করা দরকার। তরুণ ও যুবকরা কেন জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে সেই কারণগুলো খুঁজে বের করে সেই সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন।

সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকরী ভূমিকা বরাবরই অপরিসীম একজন সন্তানের মনস্তাত্ত্বিক গঠনের জন্য। সর্বপ্রথম যে নিয়ামকের ভূমিকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি, সেটি হলো পরিবার। কারণ পরিবার একটি শিশু তথা মানুষের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

একজন মানুষ তার জীবনের প্রাথমিক শিক্ষাগুলো পরিবার থেকেই পেয়ে থাকে। তাই পরিবারের সদস্যদের উচিত সন্তানের উপর যথাযথ তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব গঠনে সহায়তা করা।

জঙ্গি সংগঠনগুলোর প্রচারণা ও নিয়োগের ধরণ পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, তারা তরুণ সমাজকে টার্গেট করেই তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে, কারণ একটি দেশের তরুণরাই সেই দেশের ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে প্রধান হাতিয়ার। সেই তরুণ সমাজকে যদি সহিংসতা ও উগ্রবাদী মনোভাবে কলুষিত করা যায় তাহলে সেই দেশের ভবিষ্যৎ ও উন্নয়ন ধ্বংস করে দেওয়া সম্ভব এবং জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর উদ্দেশ্য হাসিল করা সম্ভব।